বুক রিভিউঃ ওয়ান ডাউন

গল্পটা রাহাত নামের এক ছেলের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প । রাহাতের বাবা ছিল একজন ক্রিকেট পাগল মানুষ । ১৯৯৬ সালে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে গিয়ে বাস দুর্ঘটনায় পরে মারা যায় । রাহাত তার বড় বোন রাত্রী এবং মা থাকে মামার বাসায় । ছোট থেকেই ক্রিকেটের উপর তার প্রবল আগ্রহ । ছোট থাকতেই মাঠে খেলতে গিয়ে ১২ নম্বর প্লেয়ার হিসাবে গন্য হয় সব সময় । দুই দলেরই ফিল্ডিং করে ।

গল্প যার জবানীতে বর্ণিত হয়েছে ক্রিয়া সাংবাদিক ফয়েজ ভাই রাহাতের প্রতি আলাদা মমতাবোধ করেন । তার একটা কারন হচ্ছে তিনি রাহাতকে জন্ম হতে দেখেছেন, তার বাবাকে মারা যেতে দেখেছেন । আরেকটা কারন হচ্ছে রাত্রীকে সে পছন্দ করেন । ফয়েজও আগে ক্রিকেট পছন্দ করতো, ভাল খেলতো তবে ইনজুরিতে পরে তার একটা পা খানিকটা খোড়া হয়ে যায় । এখন সে ক্রিড়া সাংবাদিক ।
ফয়েজ নানান ভাবে চেষ্টা করতে থাকে রাহাতকে ভাল ক্রিকেটার বানানোর জন্য । একটা সময়ে আস্তে আস্তে রাহাত ক্রিকেটার হয়ে উঠতে থাকে । কিন্তু ঝামেলা বাঁধে যখন ফয়েজ ভাল চাকরি ট্রেনিং এ দেশের বাইরে চলে যায় । তখন রাত্রী বিয়ে হয়ে যায় আর রাহাতকে চলে আসতে হয় মালেশিয়াতে । সেখানে এক হোটেলে কাজ করা অবস্থায় হোটেলের মালিক মিস ভারতইর ক্রিটেক টিমে রাহাত খেলতে থাকে ।
অনেক কয় বছর পরে মালেশিয়ান টিমের সাথে বাংলাদেশ এ দলের খেলা পড়লে রাহাত বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে । এবং বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় । বাংলাদেশের নির্বাচকদের নজরে পড়ে সে । ফয়েজের মাধ্যমে জানতে পারে যে রাহাত বাংলাদেশী । তারপর সে বাংলাদেশে আসে । বিপিএল খেলে এবং এক সময়ে বাংলাদেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতে । যখন রাহাত বিখ্যাত হয়ে যায় তার জীবনী লিখতে বসে সাংবাদিক ফয়েজ । "ওয়ান ডাউন" হচ্ছে সেই জীবনী গ্রন্থ । দুনিয়ার প্রায় সব জীবনগ্রন্থ পড়তে বিরক্ত লাগে এই ওয়ানডাউন পড়তেই ততটাই বিরক্তি লেগেছে । পার্থক্য হচ্ছে অন্য জীবনীগ্রন্থ গুলোর কাহিনী হচ্ছে সত্য আর এটা হচ্ছে বানানো ।
"ওয়ান ডাউন" গল্পের মুল হচ্ছে এটাই । এই গল্পের ভাল দিক আমি ঠিক খুজে পাই নি । বইয়ের পাতা আর বাধাইয়ের মান বেশ ভাল । হাতে নিয়ে একটা সুখই সুখই ভাব আছে । বই পড়তে খুব বেশি সময় লাগে নি । একটা ক্রিকেটীয় আবেগ রয়েছে । আমাদের মত ক্রিকেট পাগল জাতীর কাছে এই বই সমাদর পাওয়ার কথা । হয়তো পেয়েছেও !
এইবইয়ের কিছু খারাপ দিক নিয়ে বলি ! প্রথম হচ্ছে গল্পের ভেতরে তাড়াহুড়া ভাব ছিল খুব বেশি । আমি খানিকটা নিশ্চিত এই বই লিখতে লেখক খুব বেশি সময় নেন নি । তাড়াহুড়া করে যে একটা বই বের করতে হবে কিছু একটা লিখতে এই মনভাবই ছিল লেখকের । পুরো লেখা পড়তে গিয়ে আমার বারবার কেবল মনে হয়েছে এই কথা গুলো কি আরও একটু চমৎকার ভাবে আরও একটু সময়ে নিয়ে লিখলে হত না ? একটা বই লিখতে লেগে যে পরিমান ধৈর্য্য আর সময় নিয়ে লেখা উচিৎ তার কিছুই ছিল না এর ভেতরে ।
আরেকটা খারাপ দিক হচ্ছে লেখার ভেতরে ক্রিকেটের তথ্য এতো বেশি যে সেটা পড়তে গিয়ে রীতিমত বিরক্ত চলে এসেছে । বাংলাদেশ কোন সময়ে কত রান করেছে কে কত করেছে যা কিনা ইন্টানেটে ভর্তি সেই সব তথ্য পৃষ্টার পর পৃষ্ঠা লেখা হয়েছে । কেন লেখা হয়েছে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারি নি । ক্রিকেট বিষয়ক গল্প যেহেতু ক্রিকেটের কথা আসবেই এটা স্বাভাবিক । কিন্তু তাই বলে এতো বর্ণনার তো কোন দরকার নেই ।
সব থেকে খারাপ দিক যেটা পড়তে গিয়ে আমার মনে হয়েছে বইয়ে লেখা এবং লাইনের ভেতরে গ্যাপ রাখা হয়েছে অনেক বেশি । ১০০ পেইজের বইয়ের যে রকম লাইণ গ্যাপ আর ফ্রন্ট সাইজ অন্য সব বইতে থাকে এই বইতে ছিল তার প্রায় দ্বিগুণ । গুনে দেখলাম প্রতি পাতার যেখানে সাধারন বইতে ২৬০ থেকে ৩০০ শব্দ থাকে এই বইতে রয়েছে মাত্র ১৭০ থেকে ১৯০ শব্দ । স্পষ্ট ভাবে লেখক এখানে তার বইয়ের পাতা বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন । বই পড়তে গিয়ে আমার ছাত্র জীবনে এসাইনমেন্ট করার কথা মনে হয়েছে । যখন আর কিছু লেখার খুজে পেতাম না তখন আর আমি ফ্রন্ট সাইজ বাড়াতাম, লাইণ গ্যাপ বাড়িয়ে এসাইনমেন্টটা একটু ভারী করার চেষ্টা করতাম । এই বইতেই এই চেষ্টা করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে । ব্যাপারটা খুবই দৃষ্টিকটু ! ১১৯ পেইজের বইটা ৭০ পেইজের হত যদি লেখক এই চেষ্টা না করতো !
যারা খুব বেশি ক্রিকেট পাগল তাদের কাছে হয়তো বই ভাল লাগতে পারে কিন্তু একজন পাঠক হিসাবে আমার কাছে এই বই মোটেও ভাল লাগে নি । পড়তে যেহেতু বলছি না তাই বইয়ের লেখক প্রকাশকের নাম দিচ্ছি না ।
নট হ্যাপি রিডিং