-আমি গেলাম ।
আমার কন্ঠস্বর শুনে সুপ্তি রান্না ঘর থেকে দৌড়ে বের হয়ে এল । আমার দিকে
তাকিয়ে বলল
-গেলাম মানে ? খাবে না ?
-তোমাকে বলেছিলাম না আজকে আমার একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে ।
-না খেয়ে কোথায়ও যেতে হবে না ।
-আরে বাবা দেরি করলে চাকরি চলে যাবে !
-চলে যাক । সমস্যা নেই । না খেয়ে কোথাও যেতে হবে না !
-প্লিজ !
-কোন প্লিজ না ! রান্না হয়ে গেছে । খেয়ে তারপর যাবা ।
-আরে বাবা ....
সুপ্তি আমার দিকে কিছুটা সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-যদি এখন না খেয়ে চলে যাও তাহলে কিন্তু আমি জানলা দিয়ে সব কিছু ফেলে দেব
! তুমি আমাকে চেনো !
আমি সুপ্তিকে এই কদিনেই খুব ভাল করেই চিনেছি । তাই আর কথা বাড়ালাম না ।
বললাম
-জলদি আনো । আজকে তুমি আমাকে বকা শুনিয়েই ছাড়বে !
সুপ্তির মুখে হাসি ফুটলো । আমি খাবার টেবিলের উপরে বসতে বসতেই দেখি ধোয়া
ওঠা রাইস বোল নিয়ে সুপ্তি হাজির । বোলের দিকে তাকিয়েই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল ।
ভুনা খিচুরি দেখা যাচ্ছে । আমার সব থেকে পছন্দের খাবার । এতো সকালে সুপ্তি এটা
রান্না করলো কিভাবে ?
আমি ওর দিকে তাকাতেই ওর চোখে একটা হাসি দেখতে পেলাম না । হাসিটা আমার চেনা
। আমাকে যখন ও খুশি করে কিংবা আমি যখন ওর কোন কাজে খুশি হই তখন আমার দিকে তাকিয়েই
ও সেটা বুঝিয়ে দেয় যে দেখেছো তো মিস্টার তোমাকে খুশি করতে আমি কত কিছুই না করি ।
আমি কিছু জানতে চাওয়ার আগেই সুপ্তি বলল
-কাল রাতে সব রেডি করে রেখেছিলাম ।
আমি বললাম
-এতো ঝামেলা করতে যাও কেন ? এতো কষ্ট তো চাকরি
কর আবার আমার জন্য রান্না কর ঘর সামলাও । এতো কিছুর তো দরকার নেই ।
সুপ্তি বলল
-দরকার আছে কি নেই সেটা আমি বুঝবো । সেটা তোমাকে বুঝতে হবে না । ঠিক আছে
?
-হুম !
-এখন জলদি জলদি খেয়ে ফেলো তো । দেখো লবন ঠিক আছে কি না !
সুপ্তির সাথে খুব বেশি দিন হয় নি আমার বিয়ে হয়েছে কিন্তু ওকে দেখলে মনে হয়
যেন কত দিন ধরে আমাদের সংসার চলছে । সব কিছু কত চমৎকার ভাবে মানিয়ে নিয়েছে । আমি
আসলে ভাবতেও পারি নি কোন দিন এমন করে আমার জীবন টাও সাজিয়ে গুছিয়ে দেওয়ার জন্য কেউ
চলে আসবে ।
আমি খিচুরী মুখে দিতে দিতে সুপ্তির দিকে তাকাই । মেয়েটা আমার দিকে গভীর
চোখে তাকিয়ে আছে । বোঝার চেষ্টা করছে আমার আসলে খেতে ভাল লাগছে কি না ! আমি এক
মুঠি মুখে দিয়ে পরের মুঠোটা সুপ্তির দিকে বাড়িয়ে দিলাম ।
ও মানা করলো না । বরং ওর চেহারা দেখে মনে হল যেন ও ঠিক এটার জন্যই অপেক্ষাই
করছিলো ।
আমাদের প্রতিদিনটা ঠিক এভাবেই শুরু হয় । প্রথম প্রথম আমি সুপ্তিকে বললাম যে
সকালে উঠতে হবে না । একটু দেরি যেন আমার সাথেই ওঠে । তখন আমরা এক সাথেই অফিসের
জন্য বের হতাম । পথে এক সাথে নাস্তা সেরে নিতাম । তারপর দুজন দুজনের অফিসের দিকে ।
কিন্তু ইদানিং কি যেন হয়েছে । সুপ্তিকে দেখি আমার আগেই ঘুম থেকে উঠে যায় ।
প্রতিদিন সকালেি হয় রুটি নয়তো গরম ভাত থাকে । সাথে থাকে আলু ভর্তা কিংবা ডাল
চচ্চরী । আর কত রকমের খাবার ! প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ও এসবের আয়োজন করে ঘুমায়
। আমি ওকে এসব ঝামেলা করতে মানা করলেও শুনে না !
খাওয়া শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যিই দেরি হয়ে গেছে । আমি সুপ্তির
দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমার খবরই আছে বুঝেছো ?
-খুব বুঝেছি । তোমার বস কিছু বললেই আমার কথা বলবে । বলবা যে আমার
স্বামীর চাকরী যদি সে খায় তাহলে তাকে কাচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবো ।
আমি খানিকটা হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলাম দরজা দিয়ে । লিফটের বোতাম চেপে
দাড়িয়েছি তখনই মনে হল কিছু একটা বাদ গেছে । কিন্তু এখন আবার দরজার দিকে গেলে লিফটা
ছুটে যেতে পারে । যখন ভাবছি যাবো কি না তখন লিফট খুলে গেল । ভেতরে বেশ কয়েকজন
মানুষকে দেখতে পেলাম ।
আমি ভেতরে আসছি না দেখেও উপর তলার মামুন সাহেব বলল
-কই আসুন !
-আপনারা যান আসলে আমি আমার মানি ব্যাগটা আনতে ভুলে গেছি ।
আমি আবার দরজার দিকে দৌড়ালাম করিডর দিয়ে । দরকার কাছে এসে দেখি সুপ্তি
দাড়িয়ে আছে । ও নিজেো বুঝতে পেরেছে আমি কিছু ভুলে গেছি । দরজার কাছে দাড়িয়েই ওর
কপালে চুমু খেলাম । এটা আমার প্রতি দিনকার রুটিন । সকালে বের হওয়ার আগে ওর কপালে
চুমু খেতেই হবে । ভুলে গেলে চলবে না !
আজকে তাড়াহুড়ার জন্য প্রায়ই ভুলে গেছিলাম । কপাল থেকে ঠোঁট সরিয়ে এবার ওর
ঠোঁটে চুমু খেলাম । তারপর বলল
-এটা আজকের বোনাস !
-বোনাস না এটা ফাইন ! আজকে ভুলে গেছিলে এই জন্য ।
-ভুলি তো আর নাই !
-আহ খুব মনে আছে দেখছি ! আজকে অফিস থেকে বাসায় আসো তোমার নামে আরও ফাইণ
জমে গেছে । আপাতত এটাতেও চলবে !
আমি হাসলাম । সুপ্তিও হাসলো । ওকে রেখে আবারও লিফটের দিকে হাটা দিলাম ।
হাটতে হাটতে মনে হল জীবনটা আসলেই চমৎকার আমার !